logo

আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে বলে সন্দেহ হলে কী করবেন?

Medically Approved by Dr. Seema

Table of Contents

dengue-feverডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে আক্রান্ত করে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বর্ন ডিজিজেস (NCVBD)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুর কারণে। ভারতে বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়, কারণ এই সময়ে মশার বংশবৃদ্ধির হার বেড়ে যায়। ডেঙ্গু ঠিক সময়ে শনাক্ত এবং চিকিৎসা না করা হলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

এই প্রবন্ধে আমরা ডেঙ্গু জ্বর কী, এর কারণ, উপসর্গ, নির্ণয় পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা এবং আপনি যদি মনে করেন আপনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, তাহলে কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা আলোচনা করব।

ডেঙ্গু জ্বর কী?

ডেঙ্গু জ্বর হল একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা Aedes aegypti নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে। ডেঙ্গু সংক্রমণে হালকা থেকে শুরু করে গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে, এবং অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

 

ডেঙ্গু সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে, যখন মশার প্রজনন বেড়ে যায়।

ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণ কী?

ডেঙ্গু ভাইরাস (DENV) ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণ, যার চারটি প্রকার আছে: DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। যখন কোনও সংক্রামিত Aedes মশা কাউকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।

 

এই মশাগুলি সাধারণত ঘরের আশেপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। একজন ব্যক্তি একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন, কারণ এক ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য প্রকারের বিরুদ্ধে কাজ করে না।

ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ ও সতর্কতামূলক সংকেত কী কী?

ডেঙ্গুর প্রাথমিক উপসর্গ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়। মশার কামড়ের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

 

সাধারণ উপসর্গ:

  1. হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর (৪০°C/১০৪°F)
  2. চোখের পেছনে তীব্র মাথাব্যথা
  3. পেশী ও অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা
  4. জ্বরের ২-৫ দিনের মধ্যে গায়ে র‍্যাশ ওঠা
  5. বমি বমি ভাব ও বমি
  6. হালকা রক্তক্ষরণ (যেমন: নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া)

 

গুরুতর ডেঙ্গুর সতর্কতা সংকেত:

  1. তীব্র পেটব্যথা
  2. অবিরাম বমি
  3. দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
  4. মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া
  5. বমি বা মলত্যাগে রক্ত
  6. অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  7. ফ্যাকাশে ও ঠান্ডা ত্বক

ডেঙ্গু কীভাবে শনাক্ত করা হয়?

ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার নিচের পরীক্ষা করাতে বলেন:

  1. NS1 অ্যান্টিজেন টেস্ট: সংক্রমণের প্রথম ৫ দিনের মধ্যে ভাইরাস সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  2. IgM ও IgG অ্যান্টিবডি টেস্ট: ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীর যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তা পরীক্ষা করা হয়।
  3. সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (CBC): এতে প্লেটলেট কমে যাওয়া বোঝা যায়, যা ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ।

 

ডেঙ্গু সন্দেহ হলে যথাযথ পরীক্ষা করে দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি। তবে সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করা উচিত।

ডেঙ্গু সন্দেহ হলে কী করবেন?

প্রত্যেকটি মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় না। তবে যদি মনে হয় যে ডেঙ্গু আক্রান্ত মশা কামড় দিয়েছে এবং উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাহলে নিচের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:

 

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
  2. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শরীরকে ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠতে বিশ্রাম দরকার।
  3. শরীরকে আর্দ্র রাখুন: প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, ফলের রস ও ওআরএস পান করুন।
  4. শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত মাপুন: জ্বরের ধরন পর্যবেক্ষণ করুন।
  5. গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো লক্ষ্য রাখুন: শরীরের অবস্থার পরিবর্তন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
  6. ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন: শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত।
  7. এসপিরিন ও নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ এড়িয়ে চলুন: এগুলো অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  8. প্লেটলেট কাউন্ট নিয়মিত চেক করুন: ডেঙ্গুতে প্লেটলেট হ্রাস পেতে পারে, যা নিয়মিত নজরদারিতে রাখা জরুরি।

 

ডেঙ্গুর সময় মূত্রের পরিমাণ এবং রং পরীক্ষা করুন—গাঢ় রং মানে শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। পরিবারের লোকেরা রোগীর উপসর্গ ও শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন লিখে রাখুন। বমি হলে, দিনে কয়েকবার অল্প অল্প করে খাওয়া ভালো। যদি প্লেটলেট খুব কমে যায়, তবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার হতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ কীভাবে করা যায়?

  1. মশার প্রজননের স্থান, যেমন জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে ফেলুন।
  2. দিনের বেলা মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
  3. পুরো হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরুন।
  4. মশারি বা জানালায় নেট ব্যবহার করুন।
  5. বাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।

 

ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। যথাযথ সময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা করালে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

 

সঠিক ডায়াগনোসিস ও নির্ভরযোগ্য ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে Dr Lal PathLabs অ্যাপ ডাউনলোড করে বুকিং করুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQs)

1. যদি ডেঙ্গু হয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে কী করতে হবে?

চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন, বিশ্রাম নিন, প্রচুর পানি পান করুন, এবং উপসর্গগুলোর ওপর নজর রাখুন।

 

2. ডেঙ্গু কীভাবে নিশ্চিত হয়?
NS1 অ্যান্টিজেন টেস্ট, অ্যান্টিবডি টেস্ট ও রোগের উপসর্গ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করা হয়।

 

3. ডেঙ্গু কতদিন থাকে?
ডেঙ্গু সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। বেশিরভাগ রোগী ১-২ সপ্তাহে সেরে ওঠেন, তবে দুর্বলতা কিছুদিন থাকতে পারে।

378 Views

Get Tested with Doctor-Curated Packages for a Healthier Life

Related Posts

Categories

Other Related Articles