ডেঙ্গু জ্বর এবং অন্যান্য মশাবাহিত রোগের মধ্যে সম্পর্ক
- 6 Jul, 2025
- Written by Team Dr Lal PathLabs
Medically Approved by Dr. Seema
Table of Contents
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০% এরও বেশি ভেক্টর-জনিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে — এমন অসুখ যা মশা, টিক, মাছির মতো বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়। এদের মধ্যে মশাবাহিত সংক্রমণ সবচেয়ে বড় হুমকি সৃষ্টি করে, যার মধ্যে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু সবচেয়ে সাধারণ এবং বিপজ্জনক। যদিও এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই একই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, তবে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে সংক্রমণের ধরন, উপসর্গ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার দিক থেকে।
ডেঙ্গু জ্বর কী?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসঘটিত অসুখ যা চারটি ডেঙ্গু ভাইরাস (DENV 1–4) দ্বারা হয় এবং প্রধানত Aedes aegypti মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশারা সাধারণত সকাল এবং বিকেলের দিকে কামড়ায় এবং পরিষ্কার, স্থির পানিতে বংশবিস্তার করে যা আমাদের আশেপাশে ঘরের পাত্র বা কন্টেনারে দেখা যায়।
ডেঙ্গু মশার কামড়ের পর সাধারণত ৪–৭ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়, যার মধ্যে চোখের পিছনে ব্যথা, উচ্চ জ্বর, চুলকানি ও র্যাশ, তীব্র মাথাব্যথা, পেশি ও অস্থিসন্ধির ব্যথা ইত্যাদি রয়েছে। চরম ক্ষেত্রে এটি শক সিনড্রোম বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে পরিণত হতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। যেহেতু চার ধরনের ভাইরাস রয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারবার আক্রান্ত হতে পারেন। দ্বিতীয়বার সংক্রমণে গুরুতর অসুখের ঝুঁকি বেশি থাকে, একে বলা হয় Antibody-Dependent Enhancement (ADE)।
কোন কোন রোগ মশার মাধ্যমে ছড়ায়?
ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া ছাড়াও, নিচের গুরুতর রোগগুলো মশার মাধ্যমে ছড়ায়:
- ম্যালেরিয়া – Plasmodium পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয় এবং Anopheles মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এতে উচ্চ জ্বর, শীতজ্বর, এমনকি মৃত্যু হতে পারে।
- চিকুনগুনিয়া – Aedes মশার মাধ্যমে ছড়ায়, এতে তীব্র অস্থিসন্ধির ব্যথা ও জ্বর হয় যা অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
- জিকা ভাইরাস – Aedes মশার মাধ্যমে ছড়ায়। উপসর্গ সাধারণত হালকা হলেও গর্ভাবস্থায় আক্রান্ত হলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
- জাপানিজ এনসেফালাইটিস – Culex মশার মাধ্যমে ছড়ায়, এটি স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করে।
- ইয়েলো ফিভার – আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় Aedes মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এতে জন্ডিস, রক্তক্ষরণ, এবং অঙ্গ বিকল হতে পারে।
- ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস – Culex মশার মাধ্যমে ছড়ায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হালকা উপসর্গ থাকে, তবে জটিল ক্ষেত্রে স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে অন্যান্য মশাবাহিত রোগের কী সম্পর্ক?
ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ অনেক ক্ষেত্রেই একত্রে ঘটে এবং তা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক:
- ভেক্টর ওভারল্যাপ জোন: ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উভয়ই সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে দেখা যায় যেখানে Aedes ও Anopheles উভয় মশা বসবাস করে।
- রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্তি: অধিকাংশ মশাবাহিত রোগের উপসর্গ প্রায় একইরকম — জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা — তাই ডেঙ্গু পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ চিহ্নিত করা জরুরি।
- ঋতুজনিত মিল: বর্ষাকালে এই রোগগুলো একত্রে ছড়ায়, ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
- সহ-সংক্রমণের সম্ভাবনা: একজন ব্যক্তি একইসাথে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন, যা চিকিৎসা আরও জটিল করে তোলে।
ভেক্টর-জনিত রোগ প্রতিরোধে করণীয় কী?
- পানির পাত্র, ফুলদানি, টায়ার, পাখির খাওয়ার পাত্র ইত্যাদি নিয়মিত ফেলে বা ঢেকে রাখা।
- DEET, পিকারিডিন বা লেবু-ইউক্যালিপটাস তেলের মতো উপাদানযুক্ত মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার।
- মশারি, জানালা ও দরজায় জাল লাগানো এবং ঢাকাঢাকি জামাকাপড় পরা।
- ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য সচেতনতামূলক প্রচার।
- ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি করে ও জমা পানি অপসারণ করে মশার প্রজনন রোধ।
- টিকা (যেমন ইয়েলো ফিভার, সীমিত ক্ষেত্রে ডেঙ্গু) এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা।
- উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম, জল পান, তাপমাত্রা মাপা ও উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করা।
FAQs
1. ডেঙ্গু মশা অন্যান্য মশার থেকে কীভাবে আলাদা?
ডেঙ্গু মশার (Aedes) গায়ে ও পায়ে সাদা ডোরা থাকে এবং দিনে কামড়ায়। ম্যালেরিয়ার মশা (Anopheles) সাধারণত রাত্রে কামড়ায় এবং গায়ে ডোরা থাকে না। সঠিক সময়ে সঠিক সুরক্ষা নেওয়া জরুরি।
2. ডেঙ্গু হলে ঘুম কতটা দরকার?
ডেঙ্গুর সময় ঘুম ও বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত।








